December 25, 2024, 12:18 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
গত ৭২ ঘন্টায় কুষ্টিয়ায় করোনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে গত ৪৮ ঘন্টা ধরে করোনা শনাক্তের হার অব্যাহত রয়েছে ৪০ শতাংশের উপরে। জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন বিদ্যমান আক্রান্তের যে সংখ্যা এই মুহুর্তে জেলায় তাতে মৃত্যুর হারে উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা। কারন আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর রোগীর সংখ্যা প্রচুর (৫০’র উপরে)।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘন্টায়ও মৃত্যু ছিল ৭ জনের এবং শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ০৫ শতাংশ। তার আগের ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ছিল ৯ জন সেখানে শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
করোনা ডেডিকেটেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুল মোমেন জানান শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যার করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন ২৬১ জন। আগের দিন এটি ছিল ২০৪ জন। তার আগের দিন সংখ্যা ছিল ২০০।
মোমেন জানান শুক্রবার দিনজুড়ে বৃষ্টির কারনে নমুনা পরীক্ষায় ইচ্ছুকদের উপস্থিতি কম ছিল। আজ শনিবার সকাল থেকে নমুনা প্রদানকারীদের প্রচুর ভীঁড় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় হোমআইসোলেশনে আছেন ২১০৭ জন। গতকাল এ সংখ্যা ছিল ২১৪৯জন। তার আগের দিন ছিল ২১০০জন।
তিনি জানান আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় শ’য়ের কাছাকাছি রোগীকে অক্্িরজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। অনেকেই হোম আইসোলেশনে অক্্িরজেন নিচ্ছেন।
শনিবার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ৭২ ঘন্টায় মারা যাওয়া সবাই কুষ্টিয়া জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
জেলায় শনাক্ত ও মৃত্যুর এ উর্ধ্বগতিকে জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনিবার্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন প্রতিরোধের সাধারণ নিয়মাবলী যেখানে একেবারেই উপেক্ষিত সেখানে এই পরিণতি হবেই। তিনি জানান এটা স্বাস্থ্য বিভাগ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। প্রশাসন পদক্ষেপ নিতে যেমন দেরি করে ফেলেছিল সাধারণ জনগনও নিয়ম পালনের একেবারেই নিস্পৃহ ছিল। মানুষ সচেতন হলে এটা এড়ানো সম্ভব ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান স্বাস্থ্য বিভাগে লোকবল সংকট রয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়েছে। তার মতে এখন যে পরিস্থিতি সেটা মোকাবেলা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
কুষ্টিয়ায় শনিবার সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২৮২জন এবং মারা গেছেন ২২৫ জন।
এদিকে বর্তমান পরিস্তিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন। তারা করোনা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা দেখতে পেয়েছেন।
কুষ্টিয়ার সামাজিক সংগঠনসমৃহের বৃহত্তর প্লাটফরম সম্মিলিত সামাজিক জোটের চেয়ারম্যান ড. আমানুর আমান বলেন ৬ সদস্যের সরকারী জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি অনেকটাই অর্ন্তমুখী। এটিকে জেলার বৃহত্তর পরিস্থিতির আলোকে কাজ করার প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় আরো বেশী হলে ভাল হতো।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপ্যাল ও কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর এসএম মুস্তানজিদ জেলায় করোনা ব্যবস্থাপনায় ত্রæটি ছিল এবং এখনও আছে বলে জানান। তিনি বলেন সমন্বয়টা হতে হবে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সাথে সিভিল প্রশাসনের ; সিভিল প্রশাসনের সাথে স্বাস্থ্য প্রশাসনের নয়। অথচ আমরা বারবার সেটাই করে যাচ্ছি। মানুষের জীবন যেখানে সেখানে এ ধরনের অসমন্বিত অবস্থা প্রত্যাশিত ছিল না।
তিনি বলেন সবথেকে ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগই কাজ করছে। এখানে অনেক বেশী সহযোগীতা প্রয়োজন ছিল।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন করোনা প্রতিরোধে সবসময়ই একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল এবং অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সকল প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন অব্যাহতভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচেআছ। সমন্বয়ের কোন ঘাটতি নেই। বিদ্যমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে তিনি সবাইকেই একসাথে কাজ করার আহবান জানান।
Leave a Reply